WB Govt Employees Salary Increasing 2025 : বর্তমানে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বেতন ও ভাতাসংক্রান্ত বিভিন্ন কারন নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে বকেয়া মহার্ঘভাতা (ডিএ) প্রদান এবং সপ্তম পে বেতন কাঠামো চালুর বিষয়ে আন্দোলন, মামলা-মোকদ্দমা চলার পরে, এবার ধীরে ধীরে সুসংবাদের আলো দেখতে শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা। একদিকে রাজ্যে বকেয়া ডিএ মেটানোর প্রক্রিয়া প্রশাসনিকভাবে শুরু করা হয়েছে, অন্যদিকে সপ্তম পে কমিশনের গঠনের ব্যাপারেও ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। যা কর্মীদের জন্য জোড়ালো সুসংবাদ হতে চলেছে।
সম্পর্কিত পোস্ট
আইটি সেক্টরে ৬৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থান, ইনফোসিস ও ক্যাপজেমেনি দারুণ পদক্ষেপ - IT Sector Huge Vacancy 2025বকেয়া ডিএ: আইনি লড়াইয়ের মধ্যেও এগোচ্ছে প্রক্রিয়া
কমবেশি সকলে জানি ডিএ মামলার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৬ সালে। সেই থেকে শুরু হয়েছে কর্মীদের দীর্ঘ ৮-৯ বছরের আইনি লড়াই। প্রথমে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (SAT), পরে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সবশেষে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত দারস্থ হশ সরকারি কর্মীরা।
সর্বশেষে পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে দেয়, পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় থাকা সরকারি কর্মীদের ২৫% বকেয়া ডিএ দ্রুত মিটিয়ে দিতে হবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ৬ সপ্তাহের মধ্যে এই বকেয়া পরিশোধ করতে বলা হয়েছে এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে চার সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শীর্ষ আদালত কর্তৃক।
শুরু আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে হিসাব নির্ধারণ
এই বিপুল অঙ্কের বকেয়া ডিএ নির্ধারণ করতে গিয়ে যাতে প্রশাসনিক জটিলতায় না পড়তে হয়, তাই রাজ্য অর্থ দপ্তর প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে। IFMS পোর্টাল ব্যবহার করে রাজ্য সরকারি কর্মীদের চাকরির যাবতীয় তথ্য অনলাইনে আপলোড করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরির কার্যকালের তথ্য আপলোড করতে হবে এই পোর্টালে। আর এই তথ্যের ভিত্তিতে প্রত্যেক কর্মীর প্রাপ্য বকেয়া নির্ধারণ করা হবে। ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহের কাজও শুরু হয়ে গেছে বলে জানা গিয়েছে।
কারা বকেয়া ডিএ পেতে পারেন, কারা নাও পেতে পারেন?
যারা বকেয়া পাবেন:
- যে সমস্ত সরকারি কর্মীরা ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে কর্মরত ছিলেন।
- এমনকি যে সকল কর্মীরা পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় বেতন পেয়ে আসছিলেন।
যাঁরা বকেয়া নাও পেতে পারেন:
- ইতিমধ্যে যাদের চাকরি আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়েছে।
- যে সকল কর্মীরা ২০১৯ সালের পরে চাকরিতে যোগদান করেছেন।
- যে সমস্ত কর্মীরা এখনও পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় নেই।
রাজ্য সরকারের আর্থিক চ্যালেঞ্জ
এই বিপুল অঙ্কের বকেয়া ডিএ মেটাতে গিয়ে রাজ্য সরকারের উপর অর্থনৈতিক কঠোর চাপ তৈরি হয়েছে।তাইতো কয়েক হাজার কোটি টাকা একসঙ্গে বরাদ্দ করা সরকারের পক্ষে কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক সেই কারণে অন্যদিকে রাজ্য সরকার আদালতে রায়ের কিছু অংশ সংশোধনের আর্জি জানিয়ে রেখেছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশের ফলে সরকার এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
সপ্তম পে কমিশন: আশার আলো দেখছেন কর্মীরা
এদিকে বকেয়া ডিএ নিয়ে যখন আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে, ঠিক সেই সময়েই নতুন করে সপ্তম পে কমিশনের সম্ভাবনা নিয়ে রাজ্যের কর্মচারীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিচ্ছে ।
রাজ্যে সর্বশেষ ষষ্ঠ পে কমিশন চালু হয়েছিল ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। তার আগে ধারাবাহিকভাবে দশকের ব্যবধানে বিভিন্ন পে কমিশন চালু করা হয়েছিল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়:
- প্রথম পে কমিশন: ১৯৭১
- দ্বিতীয় পে কমিশন: ১৯৮১
- তৃতীয় পে কমিশন: ১৯৯০
- চতুর্থ পে কমিশন: ১৯৯৮
- পঞ্চম পে কমিশন: ২০০৯
- ষষ্ঠ পে কমিশন: ২০২০
এই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী দেখা যায়, আগামী ২০২৬ সালের আশেপাশে রাজ্যে সপ্তম পে কমিশনের ঘোষণা আসার জোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
রাজ্য সরকারের অবস্থান
তবে এত কিছু ঘটলেও এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে অফিসিয়ালভাবে সপ্তম পে কমিশন গঠনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি। যদিও প্রশাসনিক মহলের সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা শুরু হয়েছে।
রাজ্য সরকারের আর্থিক সংকট এবং চলমান বকেয়া ডিএ মেটানোর বড় চাপের মাঝেও আশা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই সপ্তম পে কমিশন গঠন করা হতে পারে।তবে এখনো পর্যন্ত সময়সীমা নিয়ে কোন স্পষ্ট ধারণা নেই।
বহু প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে
দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের সরকারি কর্মীরা বেতন ও মহার্ঘভাতা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। একদিকে আইনি জটিলতা, অন্যদিকে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বহু বছর ধরে তাদের প্রাপ্য অর্থ আটকে রাখা হয়েছিল ।
তবে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের কঠোর নির্দেশ এবং প্রশাসনিক সক্রিয়তার ফলে বকেয়া ডিএ মেটানোর পথে সরকার হাঁটতে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি সপ্তম পে কমিশনের সম্ভাবনাও জোরালোভাবে সামনে আসছে। সবমিলিয়ে বলা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বহুদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আশা করা হচ্ছে।