সুখবর!এবার রাজ্যের সকলের জন্য বিনামূল্যে চাকরির প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা শুরু, কীভাবে আবেদন করবেন? – WB Govt Free Preparation
সুখবর!এবার রাজ্যের সকলের জন্য বিনামূল্যে চাকরির প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা শুরু, কীভাবে আবেদন করবেন? - WB Govt Free Preparation
WB Govt Free Preparation: রাজ্যের সকল পড়ুয়াদের জন্য দারুন সুসংবাদ শোনালো রাজ্য সরকার। যোগ্যশ্রী প্রকল্পে এবার বড় পরিবর্তনের পথে রাজ্য সরকার। এতদিন পর্যন্ত এই প্রকল্পের সুবিধা শুধু তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের দুঃস্থ মেধাবী পড়ুয়ারাই পেতেন। তবে এবার থেকে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাও এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন বলে খবর পাওয়া গেছে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে। এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের প্রোজেক্ট অধিকর্তা অমিতকুমার কর।
সম্পর্কিত পোস্ট
মাত্র ৪,৯৯৯ টাকায় হিরোর ইলেক্ট্রিক সাইকেল? জানুন বিস্তারিত - Hero Electric Cycle 2025যোগ্যশ্রী প্রকল্প চালু হয়েছিল মূলত পিছিয়ে পড়া সমাজের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের প্রতিভা তুলে ধরার জন্য। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন আইআইটি, এনআইটি, এবং সর্বভারতীয় মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যাতে তাঁরা সাফল্য পেতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়ার জন্য এই প্রকল্পের সূচনা করা হয়। গত কয়েক বছর ধরেই এই প্রকল্প অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিয়েছে রাজ্যের দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের জীবনে।
এদিকে চলতি বছরে আইআইটিতে ১৫ জন, এনআইটিতে ২০ জন এবং সর্বভারতীয় মেডিক্যালে ১৬ জন পড়ুয়া যোগ্যতা অর্জন করেছেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে। অন্যদিকে গত তিন বছরে আইআইটিতে সুযোগ পেয়েছেন ৩৬ জন, সর্বভারতীয় জয়েন্টে ১৯০ জন, রাজ্য জয়েন্টে ১৪২৪ জন এবং নিট-এ উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩৪৩ জন পড়ুয়া। ২০২৪ সালে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১,৪৪০ জন তফসিলি ও আদিবাসী পড়ুয়াকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালে সেই সংখ্যাকে বাড়িয়ে ২ হাজারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
আর এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের। মূলত শনিবার স্কুল ছুটির পরে ও রবিবার পূর্ণাঙ্গ সময় ধরে জেলার নির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে চলে এই প্রশিক্ষণ। প্রতি বছর মোট ৩৫০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যার মধ্যে ৩২০ ঘণ্টা ক্লাস এবং ৩০ ঘণ্টা মডেল টেস্ট থাকে। এই ফ্রী প্রশিক্ষণ নিতে হলে মাধ্যমিকে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে এবং পরিবারের বার্ষিক আয় তিন লক্ষ টাকার নিচে থাকতে হবে।
যোগ্যশ্রী প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রত্যেক পড়ুয়াকে মাসে ৩০০ টাকা করে ভাতাও দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত বই ও রেফারেন্স বই সরবরাহ করা হয় নামী কোচিং সেন্টার থেকে এবং তা ছাত্রছাত্রীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে রাজ্যের ৫০টি কেন্দ্রে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য একটি অভিজ্ঞ বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা পড়ুয়াদের নিয়মিত ক্লাস নেওয়া থেকে শুরু করে মূল্যায়ন পর্যন্ত সবদিক সামলাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্যই সংরক্ষিত ছিল এই সুবিধা। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদিচ্ছা অনুযায়ী এবার থেকে সাধারণ শ্রেণির পড়ুয়ারাও এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারবেন। এটি নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কারণ, অনেক সাধারণ পরিবারের ছাত্রছাত্রীও প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হন না আর্থিক সঙ্কটের কারণে। এই সিদ্ধান্ত তাঁদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ হতে চলেছে।
যোগ্যশ্রী প্রকল্পের এই সম্প্রসারণ রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রাজ্য সরকার শুধুমাত্র সংরক্ষিত শ্রেণি নয়, বরং আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা সাধারণ শ্রেণির পড়ুয়াদের প্রতিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় এই প্রকল্প আরও মানবিক রূপ নিচ্ছে। এতে যেমন শিক্ষার সুযোগের বৈষম্য কমবে, তেমনই সমাজের সব স্তরের ছাত্রছাত্রীরাই সঠিক গাইডেন্স ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ পরীক্ষায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা পাবেন।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে রাজ্যের বহু সাধারণ ছাত্রছাত্রীর জীবনে আশার আলো দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁরা কেবল স্বপ্ন দেখবে না, বরং বাস্তবেও আইআইটি, এনআইটি কিংবা নিট-এ সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবে। যোগ্যশ্রী প্রকল্প যে সত্যিই ‘যোগ্য’-দের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রকৃত উদাহরণ হয়ে উঠছে, তা এই পরিবর্তন স্পষ্ট করে দিচ্ছে।