NRC তে নাগরিকত্ব প্রমাণে লাগলে এই নথি! আধার বা ভোটার যথেষ্ট নয় – Indian Citizenship Prove Documents
দেশে NRC তে নাগরিকত্ব প্রমাণে লাগলে এই নথি! আধার বা ভোটার যথেষ্ট নয় - তাহলে কী থাকতে হবে
Indian Citizenship Prove Documents: ২০২৬ সালের বহু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। বাংলা, অসম, কেরালা, তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলিতে ভোট হবে আগামী বছর, তবে তার আগে বিহারে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিধানসভা নির্বাচন। এই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন দেশজুড়ে শুরু করেছে বিশেষ ভোটার কার্ড সংশোধনী কর্মসূচি। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচন কমিশনকে একযোগে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে। মূলত নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি, পুরনোদের তথ্য সংশোধন এবং ডুপ্লিকেট নাম বাতিল করাই এই প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য।
সম্পর্কিত পোস্ট
মাত্র ৪,৯৯৯ টাকায় হিরোর ইলেক্ট্রিক সাইকেল? জানুন বিস্তারিত - Hero Electric Cycle 2025এই হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে গিয়ে বহু নাগরিক আধার কার্ড, প্যান কার্ড বা রেশন কার্ড দেখিয়ে নিজেদের পরিচয় প্রমাণের চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়। তবে নির্বাচন কমিশনের তরফে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এসব নথি পরিচয় এবং ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা গেলেও নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি সুপ্রিম কোর্টও একাধিকবার এ বিষয়ে মত দিয়েছে যে, শুধুমাত্র EPIC কার্ড বা রেশন কার্ড নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে যথেষ্ট নয়। ফলে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত স্পষ্ট প্রমাণপত্র দাখিলের প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ভারতের নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন চারটি নথি রয়েছে যা একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচিত হতে প্রয়োজন। প্রথমত, জন্ম শংসাপত্র – এই নথি যদি যথাযথভাবে সঠিক সময়ে রেজিস্ট্রি করা থাকে এবং তাতে ভারতের মাটিতে জন্মের উল্লেখ থাকে, তবে তা নাগরিকত্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। দ্বিতীয়ত, বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট – যেটি শুধুমাত্র বিদেশ মন্ত্রক দ্বারা জারি করা হয় এবং নাগরিকত্ব স্পষ্টভাবে তাতে উল্লেখ থাকে। তৃতীয়ত, জাতীয়তা শংসাপত্র – রাজ্য সরকার বা জেলা প্রশাসনের তরফে নির্দিষ্ট যাচাইয়ের পর এই সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। চতুর্থত, নাগরিকত্ব বা রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট – ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের আওতায় এই নথি মূলত সেইসব বিদেশি নাগরিকদের প্রদান করা হয় যাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
এই চারটি নথির মধ্যে যেকোনও একটি প্রমাণ হিসেবে থাকলেই একজন ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন বলে জানা যায় তবে তা সরকারি ঘোষণা করা হয়নি। ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করার সময় বা সংশোধনী আবেদনের ক্ষেত্রে অনেকেই ভুলভাবে ধারণা করেন যে আধার কার্ড থাকলেই যথেষ্ট। অথচ বাস্তবতা হলো, আধার কার্ড কেবলমাত্র একটি শনাক্তকরণ নথি, যা ইউআইডিএআই (UIDAI)-এর আওতায় জারি হয় এবং এতে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কোনো প্রত্যক্ষ ঘোষণা নেই। ফলে ভবিষ্যতের জটিলতা এড়াতে এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিরোধ এড়াতে উপরে উল্লেখিত চারটি নথি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে নাগরিকত্ব ইস্যু বরাবরই স্পর্শকাতর। NRC বা National Register of Citizens-এর মতো প্রকল্প চালু হওয়ার পর নাগরিকত্ব যাচাইয়ে কঠোরতা অনেক বেড়ে গেছে। অসমে দেখা গিয়েছিল বহু বছর ধরে বসবাসকারী ব্যক্তিদেরও নাম বাদ পড়েছে শুধুমাত্র উপযুক্ত নথির অভাবে। তাই ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি যেন দেশের অন্য কোনও রাজ্যে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন আগেভাগেই সচেতনতা তৈরি করতে চাইছে। ইতিমধ্যে স্কুল-কলেজ, ব্লক অফিস ও পুরসভাগুলিতে প্রচার শুরু হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ জানতে পারেন কোন নথিগুলি নাগরিকত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কোথা থেকে তা সংগ্রহ করা যায়।
এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক জানান, নাগরিকত্ব প্রমাণে একাধিক স্তরে যাচাই হবে এবং অনলাইন ও অফলাইন – দুই মাধ্যমেই নথি যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ শুধুমাত্র আবেদন করলেই হবে না, আবেদনকারীদের নথি যথাযথ কিনা, সেটিও নিশ্চিত করা হবে মাঠ পর্যায়ের অফিসারদের মাধ্যমে। ফলে এখন থেকেই নাগরিকদের সচেতনভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের মতো বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় দেশে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র সংরক্ষণ করা একটি নাগরিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কারণ একবার যদি ভোটার তালিকায় নাম বাদ পড়ে যায় বা নাগরিকত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তা শুধুমাত্র ভোটাধিকার নয়, ভবিষ্যতের সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই প্রেক্ষাপটে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্যের স্বচ্ছতা এবং নথির প্রামাণিকতা গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগামী বছরের নির্বাচনের আগে এই সংশোধনী কর্মসূচি ভারতীয় গণতন্ত্রকে আরও মজবুত করতে ভূমিকা নেবে বলেই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ একটি সঠিক এবং হালনাগাদ ভোটার তালিকা কেবলমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করে না, বরং নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের অবস্থানও নিশ্চিত করে। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের বিভ্রান্তি ও জটিলতা এড়াতে সহায়ক হবে। এখন দেখার বিষয়, কতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নাগরিকরা এই অভিযানে অংশ নেন এবং নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন।
তবে সরকার কর্তৃক এখনো পর্যন্ত কোনো ঘোষণা করা হয়নি। বিভ্রান্ত হবেন না। নিজের কাগজপত্র ঠিক করে রাখুন।