Para-teacher Salary Hike 2025: পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন ৩৫-৪০ হাজার হওয়ার সম্ভাবনা, নতুন নাম সঙ্গে সহকারী শিক্ষকের সুবিধা
West Bengal Para Teacher Salary Hike 2025: প্যারাটিচারদের বেতন ৩৫-৪০ হাজার হওয়ার সম্ভাবনা, বদলাতে পারে পদের নামও
Para-teacher Salary Hike 2025: পশ্চিমবঙ্গের প্যারাটিচারদের জন্য সম্ভবত খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে এক বড় সুখবর। বর্তমানের অস্থির চাকরির পরিবেশে যেখানে অনিশ্চয়তা ও চাপ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, ঠিক সেখানে রাজ্য সরকার নতুনভাবে ভাবছে প্যারাটিচারদের বেতন বৃদ্ধি ও তাদের পদের নাম পরিবর্তন সম্পর্কীয় বিষয়ে। যদিও এখনও এবিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা হয়নি, তবে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার প্যারাটিচারদের দীর্ঘদিনের দাবির দিকে ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছেন।
এই সম্ভাব্য বেতন বৃদ্ধি ও পদের নতুন নামকরণকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে রাজ্যের শিক্ষা মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। আসুন,এই প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক বিষয়টি।
প্যারাটিচারদের পদের নাম বদলানোর প্রস্তাব
আমরা সকলে জানি বর্তমানে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে প্যারাটিচারদের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাঁদের ছাড়া গ্রামের বহু স্কুল কার্যত অচল হয়ে যাবে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই ‘প্যারাটিচার’ পদটির সঙ্গে অস্থায়ী কর্মী ও কম মর্যাদার ধারণা জড়িয়ে রয়েছে ।
এবার এই ‘প্যারাটিচার’ শব্দটির জায়গায় “অতিরিক্ত সহকারী শিক্ষক” (Additional Assistant Teacher) নাম ব্যবহারের কথা ভাবছে সরকার।
কেন পদের নাম বদলের কথা উঠেছে?
শিক্ষা দফতর মনে করছে, ‘প্যারাটিচার’ শব্দের কারণে তাঁদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং আইনি নানা জটিলতায় পড়তে হয় তাদের।
আর বর্তমানে শিক্ষার অধিকার আইন (RTE)-এর কারণে প্যারাটিচার পদে নতুন নিয়োগে আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যারফলে নাম পরিবর্তন করলে ভবিষ্যতে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও আইনি বাধা অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া সম্প্রতি রাজ্যের প্রায় ২৬,০০০ চাকরি বাতিল হওয়ার পরে, অনেকের পুনঃনিয়োগের জন্য বিকল্প পদ সৃষ্টি করারও একটা বড় কারণ থাকতে পারে এই নাম পরিবর্তনের পরিকল্পনার পিছনে, তবে এখন তা স্পষ্ট না।
বেতন কাঠামোতে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্ভাব্য পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে আশার খবর হলো বেতন বৃদ্ধির বিষয়। এতদিন প্যারাটিচারদের বেতন ছিল খুবই সীমিত, যা দিয়ে তাঁদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল বলে তাদের দাবি ।
সূত্র অনুযায়ী:
- প্রাইমারি প্যারাটিচারদের বেতন হতে পারে প্রায় ৩৫,০০০ টাকার মতো।
- আপার প্রাইমারি প্যারাটিচারদের বেতন হতে পারে প্রায় ৪০,০০০ টাকার মতো।
এখনকার তুলনায় এই বেতন প্রায় তিনগুণ হতে চলেছে। এটা বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিনের অবহেলিত প্যারাটিচারদের জন্য এটি হবে সরকারের এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের দিকে এগোচ্ছে রাজ্য?
প্যারাটিচারদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল তাঁদের ন্যায্য মর্যাদা ও স্থিতিশীল বেতন কাঠামোর আওতায় আনা। যদি এই প্রস্তাব কার্যকর হয়, তাহলে প্যারাটিচারদের সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রায় সমান বেতন পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে চলেছে, যা তাঁদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদাকেও অনেকটাই উন্নত করবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।
সম্ভাব্য অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা
আর এখানে শুধু
বেতন বৃদ্ধিই নয়, প্যারাটিচারদের জন্য রাজ্য সরকার আরও কিছু সুবিধা চালু করার কথাও ভাবছেন। এই সুবিধাগুলি বাস্তবায়িত হলে তাঁদের কর্মজীবন অনেকটাই সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল হয়ে যাবে।চাইল্ড কেয়ার লিভ (CCL)
মহিলা প্যারাটিচারদের জন্য ৭৩০ দিনের চাইল্ড কেয়ার লিভ চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায় ।
বর্তমানে শুধু সহকারী শিক্ষকদের এই সুবিধা রয়েছে, কিন্তু প্যারাটিচাররা এই সুবিধা পান না। নতুন নিয়ম এলে প্যারাটিচাররাও সমান মর্যাদা পাবেন।
স্টাফ কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্তি
এদিকে প্রতিটি স্কুলের স্টাফ কাউন্সিলে প্যারাটিচারদেরও স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনাও চলছে। এতদিন ধরে প্যারাটিচাররা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পরিষদের বাইরে থাকতেন, যা তাঁদের জন্য বড় একটি অসাম্য ছিল।
পরীক্ষার পরিদর্শকের দায়িত্ব
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্যারাটিচারদের পরীক্ষা পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাবও রাজ্য সরকারের টেবিলে রয়েছে বলে জানা যায়। এতদিন এই দায়িত্ব ছিল কেবল স্থায়ী শিক্ষকদের জন্য। এই সুযোগ পেলে প্যারাটিচারদের মর্যাদা আরও বাড়তে পারে।
বদলি ব্যবস্থা (General & Mutual Transfer)
প্যারাটিচারদের বদলি ব্যবস্থার (Mutual Transfer ও General Transfer) দাবিও বহুদিনের।
বর্তমানে বদলির সুযোগ না থাকায় অনেকেই দূরবর্তী স্থানে বছরের পর বছর ধরপ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এবার থেকে সেই সীমাবদ্ধতা কাটানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সার্ভিস রুল ও সার্ভিস বুক
প্যারাটিচারদের জন্য আলাদা সার্ভিস রুল এবং সার্ভিস বুক তৈরি
এই না করলে বন্ধ হবে রেশন! ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে কড়া নির্দেশ রাজ্য সরকারের - Ration Card E-KYC Deadline
এটা বাস্তবায়িত হলে তাঁদের চাকরির স্থায়িত্ব ও পদোন্নতির পথ অনেকটাই সুস্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
কী বলছে প্যারাটিচারদের সংগঠন?
প্যারাটিচারদের বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সম্ভাব্য সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
তাঁদের বক্তব্য,
“আমরা বহুদিন ধরেই ন্যায্য বেতনের দাবি করে আসতেছি। যদি সরকার সত্যি এই প্রস্তাব কার্যকর করে থাকে, তাহলে আমরা প্রথমবার নিজেদের ‘শিক্ষক’ হিসেবে মর্যাদা পেতে চলেছি।”
তবে অনেকেই মনে করছেন, সরকারি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত খুব বেশি আশা না করাই ভালো কাজ হবে। কারণ অতীতেও অনেক সময় সরকার আশ্বাস দিয়েও পরে তা অনেক প্রস্তাব বাস্তবায়ন করেনি।
আশার আলো, কিন্তু অপেক্ষা এখনো বাকি
পশ্চিমবঙ্গের প্যারাটিচারদের জন্য এই সম্ভাব্য বেতন বৃদ্ধি ও নাম পরিবর্তন নিঃসন্দেহে এক আশার খবর বটে। যদি সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে প্যারাটিচারদের চাকরি হবে অনেক বেশি সম্মানজনক ও স্থিতিশীল।
তবে এই মুহূর্তে এটা শুধু প্রস্তাব পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা যায়। কবে এই ঘোষণা হবে, বা আদৌ হবে কি না, সেটা এখনো সময় স্পষ্ট না।
ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক মহল এবং প্যারাটিচারদের পরিবার সকলেই অধীর আগ্রহে সরকারি এই নতুন সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে।