WB DA Arrear Update : ২৫% নয়! লাগবে ১০০% ডিএ, হারবে রাজ্য বিরাট পদক্ষেপ কর্মীদের
WB DA মামলায় উত্তেজনা তুঙ্গে। রাজ্য সরকার ২৫% দিতে ব্যর্থ, কর্মীদের দাবি এখন ১০০% বকেয়া। সুপ্রিম কোর্টের শুনানির আগে ৯ জুলাই ধর্মঘটের ডাক। জানুন বিস্তারিত।
WB DA Arrear Update :পশ্চিমবঙ্গের মহার্ঘ্য ভাতা (Dearness Allowance – DA) সংক্রান্ত মামলাটি যেন আর থামতেই চাইছে না। দিনের পর দিন রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি, রাজ্য সরকারের জবাব, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ— সব মিলিয়ে এই মামলাটি এখন গোটা রাজ্যের অন্যতম আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
যেখানে প্রথম দিকে রাজ্য সরকার ২৫% বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটানোর কথা বলেছিল, এখন সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের সরকারি কর্মীরা জোরালো দাবি করছেন— ২৫% নয়, এককালীন ১০০% বকেয়া ডিএ দিতে হবে।
রাজ্য সরকারের দেরি: আদালত অবমাননার অভিযোগ
সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, ২৭ জুন ২০২৫-এর মধ্যে রাজ্য সরকারকে কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার অন্তত ২৫% প্রদান করতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার সময়ের মধ্যে সেই নির্দেশ পালন করতে পারেনি। রাজ্যের যুক্তি, তাদের পর্যাপ্ত সময় দরকার, কারণ আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এখনই পুরো অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতেই সরকারি কর্মীদের কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করে। কর্মীদের দাবি, রাজ্য ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের নির্দেশ পালন করেনি এবং বারবার সময়ক্ষেপণ করছে।
১০০% বকেয়া ডিএর দাবি: আত্মবিশ্বাসী কর্মীরা
সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের পাওনা টাকা আমাদের হাতে আসবেই। ২৫% নয়, আমরা সম্পূর্ণ ১০০% বকেয়া ডিএ পাব। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আমাদের পক্ষে যাবে।”
তিনি আরও জানান, কর্মীদের মধ্যে হতাশার কোনও জায়গা নেই। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত জয় কর্মীদেরই হবে।
কর্মীদের চাপ বাড়াতে ধর্মঘটের ডাক
ডিএ আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে, আগামী ৯ জুলাই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এবং রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি। তাঁদের দাবি—
- অবিলম্বে বকেয়া ডিএর ২৫% মিটিয়ে দিতে হবে।
- সর্বভারতীয় মূল্যসূচক অনুযায়ী ডিএ প্রদান চালু করতে হবে।
- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দ্রুত পালন করতে হবে।
এরই মধ্যে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্তের কাছে চিঠি পাঠিয়ে তাদের দাবির কথা জানিয়েছে।
কেন এই আন্দোলন এত গুরুত্বপূর্ণ?
রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ সরকারি কর্মচারী ও পেনশনারদের জন্য মহার্ঘ ভাতা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহায়তা। DA না বাড়লে কর্মীদের আর্থিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
সরকারি কর্মীদের অভিযোগ, দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কর্মীরা মহার্ঘ ভাতা অনেক কম পাচ্ছেন। যেখানে কেন্দ্রীয় কর্মীরা প্রায় ৫০% মহার্ঘ ভাতা পান, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এই হার অনেকটাই কম। ফলে ডিএ বকেয়ার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
এছাড়া, কর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী, বারবার আন্দোলন, মামলার পরেও রাজ্য সরকার সময়ক্ষেপণ করছে এবং কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমস্যার সমাধান করছে না।
রাজ্য সরকারের অবস্থান
রাজ্য সরকারের দাবি, তারা ইতিমধ্যে কর্মীদের বেতন, পেনশন, উৎসব ভাতা, এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের আর্থিক অবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে এখনই পুরো বকেয়া ডিএ মেটানো সম্ভব নয়।
তবে, এই যুক্তি সরকারি কর্মীদের সংগঠন মেনে নিতে নারাজ। তাদের মতে, আর্থিক সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা যায় না।
কী হতে পারে আগামী দিনে?
- সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানিতে রাজ্য সরকার কী যুক্তি দেয় এবং আদালত কী নির্দেশ দেয়, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
- কর্মীরা আশা করছেন, আদালত এবার আরও কঠোর হবে এবং দ্রুত টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেবে।
- ৯ জুলাইয়ের ধর্মঘট রাজ্য সরকারের উপর আরও চাপ বাড়াবে।
- রাজ্য সরকার হয়তো আংশিক টাকা মেটানোর নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারে।
আন্দোলনের ভবিষ্যৎ
সরকারি
কর্মীদের সংগঠনগুলো বলছে, তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। প্রয়োজনে বৃহত্তর ধর্মঘট, বিক্ষোভ, বা আদালতের কঠোর পদক্ষেপ— সব রকম পথ খোলা রাখছে তারা।এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে এই ডিএ মামলা। সরকারি কর্মীদের আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছে পেনশনারদের সমর্থনও।
রাজ্য সরকারের জন্য সামনে কঠিন সময়। একদিকে প্রশাসনিক দায়, অন্যদিকে আর্থিক সীমাবদ্ধতা— এই দুইয়ের মাঝে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করা রাজ্যের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের ডিএ মামলাটি এখন আর শুধু কর্মচারীদের আর্থিক অধিকার নয়, এটি রাজ্য সরকার এবং কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের প্রতীক। সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানিতেই হয়তো নির্ধারিত হবে এই লড়াইয়ের পরবর্তী পথ। তবে কর্মীরা এখন একটাই বার্তা দিচ্ছেন— “সব না, কিছু না। ১০০% চাই, এখানেই শান্তি।”
এই পরিস্থিতির দিকে এখন শুধু রাজ্যের কর্মীরা নয়, গোটা দেশও তাকিয়ে রয়েছে। কারণ এই মামলার রায় ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যেও কর্মচারীদের ডিএ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।
