বকেয়া DA দিলেও, একদিকে পৌষ মাস অন্যদিকে সর্বনাশ ! সরকারি কর্মীদের জন্য রাজ্য সরকারের চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত – WB Govt Employees DA Update

বকেয়া DA দিলেও, একদিকে পৌষ মাস অন্যদিকে সর্বনাশ ! সরকারি কর্মীদের জন্য রাজ্য সরকারের চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত - WB Govt Employees DA Update

WB Govt Employees DA Update :রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারী ও পেনশনপ্রাপকরা বর্তমানে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি রয়েছে। বহু প্রতীক্ষিত ২৫ শতাংশ বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা (Dearness Allowance বা DA) নিয়ে আশা যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই সামনে এল এক চমকপ্রদ তথ্য—সব কর্মী ডিএ পেলেও রয়েছে একটি খারাপ খবরও! রাজ্য সরকারের একাধিক সিদ্ধান্ত ও আর্থিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এমন দুঃসংবাদ সামনে এসেছে।

 WB Govt Employees DA Update

সম্পর্কিত পোস্ট

চাকরি পেলেই মিলবে ₹১৫,০০০ টাকা! কেন্দ্রের নতুন প্রকল্পে যুব সমাজের জন্য বড় ঘোষণা

DA বকেয়া দেওয়ার নির্দেশ: কোথা থেকে শুরু

২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মধ্যে বকেয়া DA-র জন্য অস্থিরতা শুরু হয়। মূলত মহার্ঘ্য ভাতার ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধের দাবিতে একাধিক কর্মচারী সংগঠন আন্দোলনে নামে। এই প্রেক্ষিতে মামলার রেশ গড়ায় শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। অবশেষে চলতি বছরের ১৬ মে শীর্ষ আদালত এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দেয়, যেখানে নির্দেশ দেওয়া হয় যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অবশ্যই আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়া ২৫ শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে।

সরকারি কর্মীদের আশাবাদ – সত্যিই কি সব পাবেন?

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্বস্তি এলেও একেবারে নিশ্চিন্ত ছিলেন না সরকারি কর্মচারীরা। কারণ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বাজেট ঘাটতির কারণে রাজ্য সরকারের পক্ষে এই বিপুল অঙ্কের টাকা একবারে মেটানো সম্ভব নয় বলেই মত রাজ্য প্রশাসনের। কিন্তু কর্মীরা চেয়েছিলেন এককালীন পুরো টাকা যাতে হাতে পেতে। এদিকে এখন সামনে এসেছে এক নতুন তথ্য—সরকার বকেয়ার সব অর্থ একবারে নগদে দেবে না!

কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার?

সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে, যেসব কর্মী এখনো কর্মরত রয়েছেন, তাদের বকেয়া ডিএ-র অর্থের একটি বড় অংশ সরাসরি তাদের জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড (GPF)–এ জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এর মানে হচ্ছে, এই অর্থ কর্মীরা এখনই নগদে হাতে পাবেন না, বরং তা তাদের ভবিষ্যতের সঞ্চয়ে পরিণত হয়ে থাকবে।

এই সিদ্ধান্তে যেমন সরকারের আর্থিক চাপ কিছুটা হলেও কমবে, তেমনি কর্মীদের ক্ষোভও বাড়তে পারে বলে জানা যায়। কারণ ইতিমধ্যে, বহু কর্মী এই টাকা দিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।

পেনশনপ্রাপকদের ক্ষেত্রে কী হবে?

রাজ্যের যে সকল কর্মী ইতিমধ্যেই অবসর নিয়েছেন, অর্থাৎ পেনশনভোগী, তাঁদের ক্ষেত্রে সম্ভবত পুরো টাকা নগদে দেওয়া হতে পারে। এর কারণ, তাঁদের জিপিএফ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও এখনো রাজ্য সরকার থেকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি, তবে প্রশাসনিক সূত্রে এমনটাই জানা যাচ্ছে।

১০ হাজার কোটি টাকার বকেয়া, কিন্তু সরকারি তহবিলে ঘাটতি

রাজ্য সরকারের হিসেব বলছে, ২৫% ডিএ বকেয়া মেটাতে গেলে প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়ে থাকবে। আর এই বিপুল অঙ্কের অর্থ সরকারের কাছে বর্তমানে নেই। রাজস্ব ঘাটতি, কেন্দ্রীয় অনুদান কমে যাওয়া ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে চাপ বেড়েছে রাজ্যের কোষাগারেও।

নিলামে ঋণ তুলে কী করতে চাইছে রাজ্য?

এই বকেয়া পরিশোধের দায় সামলাতে জুন মাসেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার দুটি বড় নিলামের মাধ্যমে মোট ৪০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। চলতি মাসে ১৭ জুনের নিলামে ২২ বছরের মেয়াদি বন্ডের মাধ্যমে ২০০০ কোটি টাকা এবং ৩ জুনে ২০ বছরের মেয়াদি বন্ডের মাধ্যমে আরও ২০০০ কোটি টাকা ঋণ করেছে রাজ্য।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, এই ঋণের গড় সুদের হার প্রায় ৭.১০৯৬ শতাংশ হবে। অর্থাৎ, এই অর্থ শোধ করতেও রাজ্য সরকারকে ভবিষ্যতে সুদসহ টাকা ফেরত দিতে হবে।

রাজ্য সরকারের দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ

এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ:

  • সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী সময়মতো বকেয়া ডিএ মেটানো।
  • রাজ্যের আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখা।

তাই বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে এমন এক সমাধান খোঁজা হচ্ছে যাতে কর্মীদের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়, আবার অর্থনৈতিক চাপও কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে। জিপিএফে জমা দেওয়া সেই বিকল্প হিসেবেই উঠে এসেছে।

কী বলছে কর্মচারী সংগঠনগুলো?

কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন সহ একাধিক সংগঠন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন না। তাঁদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে “পুরো বকেয়া অর্থ” মটাতে হবে। তাই জিপিএফে জমা নয়, এককালীন নগদ অর্থই চায় সরকারি কর্মীরা।

অনেক সংগঠন আবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে যদি পুরো টাকা হাতে না দেওয়া হয়, তবে আগামী মাস থেকে তাদের আন্দোলন আরও বড় আকারে শুরু হবে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী?

বিরোধী দলগুলো ইতিমধ্যেই সরকারকে চাপে ফেলতে নানা প্রতিক্রিয়া শুরু করেছে। বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “সরকার যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা বিজ্ঞাপনে খরচ করছে, সেখানে কর্মীদের ন্যায্য পাওনা না দেওয়ার জন্য অজুহাত খোঁজা হচ্ছে কেন।” অন্যদিকে, তৃণমূল সরকার এই বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

সাধারণ সরকারি কর্মীদের প্রতিক্রিয়া

সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে ইতিমধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়েছে। অনেকেই জানাচ্ছেন, তাঁরা এই টাকায় সন্তানদের পড়াশোনা, বাড়ির সংস্কার বা চিকিৎসার খাতে খরচ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এখন সেই টাকাই যদি তারা এখন না পান, তাহলে তা বিশাল সমস্যা সৃষ্টি করবে।

এক জন কর্মী জানান,

“আমরা তো শীর্ষ আদালতের রায়ের পর একটু স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন যদি আবার জিপিএফ-এ দিয়ে দেয়, তাহলে সেই টাকা তো অবসরের আগে ব্যবহারই করাই যাবে না!”

ভবিষ্যতে কী হতে পারে?

এই মুহূর্তে বিষয়টি একটি ‘আর্থিক ও রাজনৈতিক’ দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।

  • যদি রাজ্য  সরকার শেষ পর্যন্ত জিপিএফে টাকা জমা দেয়, তবে তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইও হতে পারে।
  • আবার যদি এককালীন অর্থ দিতে হয়, তবে রাজ্য সরকারকে নতুন করে আরও ঋণ তুলতে হতে পারে বা অন্য খরচ কমাতে হতে পারে।

রাজ্য সরকারি কর্মীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর পাওয়া শীর্ষ আদালতের রায় নিঃসন্দেহে এক বড় জয় ছিল। কিন্তু সেই জয়ের বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বকেয়া ডিএ মেটানোর অর্থনীতি যেমন জটিল, তেমনি এর রাজনৈতিক প্রভাবও ব্যাপক হতে চলেছে।

রাজ্য সরকারের উচিত হবে দ্রুত একটি স্পষ্ট ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত নিয়ে যাতে কর্মীরা তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য পান তা লক্ষ্য রাখা এবং প্রশাসনিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখা। নাহলে, জুনের শেষ থেকে ফের রাজ্যজুড়ে উত্তাল হতে পারে সরকারি কর্মীদের প্রতিবাদ।

আরও খবর পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন। এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন এবং আপনার মতামত জানান নিচের কমেন্ট বক্সে।

আরও পড়ুন

মাত্র ₹৭৯৯ টাকায় Jio ফোন! এখন Swiggy Instamart থেকেই ১০ মিনিটে পৌঁছে যাবে আপনার হাতে

Bongo Sathi

Bongo Sathi is an online Portal, We Daily give You content about Government Update such as Job,Scheme,Latest Announcement, Employment and Education, Banking and Others.

Related Articles

Back to top button