বহুদিনের দাবি, এবার পার্শ্ব-শিক্ষকদের জন্য সুখবর? বড় সিদ্ধান্তের পথে রাজ্য সরকার – WB Para Teacher Salary Update 2025
বহুদিনের দাবি, এবার পার্শ্ব-শিক্ষকদের জন্য সুখবর? বড় সিদ্ধান্তের পথে রাজ্য সরকার - WB Para Teacher Salary Update 2025
WB Para Teacher Salary Update 2025: রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে বড়সড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। একদিকে যখন রাজ্য এসএসসি দুর্নীতি মামলার রেশে উত্তাল গোটা রাজ্য, তখনই অন্যদিকে রাজ্যের হাজার হাজার পার্শ্ব-শিক্ষকদের (Para Teachers) জন্য সুখবর আসতে চলেছে বলে খবর মিলছে। সরকারি সূত্রে ইঙ্গিত—বহুদিনের দাবি এবার বাস্তব রূপ পেতে চলেছে। তাঁদের বেতন বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পদ পরিবর্তন—সবকিছু নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা চলছে।
সম্পর্কিত পোস্ট
দক্ষিণে নেই স্বস্তি! উত্তরের জেলায় জেলায় সপ্তাহ জুড়ে ঝড়বৃষ্টি - WB Monsoon Update 2025SSC কাণ্ডের মধ্যে আশার আলো
যদিও গত কয়েক মাস ধরে SSC ২০১৬ নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রীতিমতো রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়েছে একাধিক প্যানেল, চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী। একদিকে বিক্ষোভ, অনশন, রাজভবন অভিযানের মতো ঘটনার মধ্যেই রাজ্যের শিক্ষা দফতর চাইছে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে—তাতে প্রশাসনের ভাবমূর্তি যেমন কিছুটা মেরামত হবে, তেমনি শিক্ষা পরিষেবাতেও গতি আসবে।
এই আবহেই প্যারাটিচারদের নিয়ে রাজ্য সরকারের ভাবনা এখন সংবেদনশীল ও ফলপ্রসূ হতে চলেছে।
কে এই পার্শ্ব-শিক্ষক?
রাজ্যের পার্শ্ব-শিক্ষক বা Para Teacher হলেন সেই সমস্ত শিক্ষাকর্মী, যাঁরা মূল শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত না হলেও রাজ্যের প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান করে আসছেন। কম বেতনে, অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও তাঁরা গ্রামীণ ও দুর্বল অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন।
বর্তমানে রাজ্যে আনুমানিক প্রায় ৪২,০০০ পার্শ্ব-শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।
বেতন কাঠামোতে বড় বদল!
সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, পার্শ্ব-শিক্ষকদের বেতনে একটি ঐতিহাসিক বৃদ্ধি আনতে পারে রাজ্য সরকার। দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের দাবি—‘সমকাজে সমবেতন’ এবার হয়তো কিছুটা হলেও বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
সূত্র বলছে,
- প্রাথমিক স্তরের প্যারাটিচাররা যেখানে এখনও মাসে ₹১০,০০০ মতো বেতন পান, তা বৃদ্ধি পেয়ে হতে পারে ₹৩৫,০০০!
- অন্যদিকে উচ্চ প্রাথমিক স্তরের প্যারাটিচাররা যাঁরা মাসিক ₹১৩,০০০ পান, তাঁদের বেতন বেড়ে গিয়ে পৌঁছাতে পারে ₹৪০,০০০ পর্যন্ত!
নোট : এমন হলে এই বেতন সহকারী শিক্ষকদের (Assistant Teacher) প্রারম্ভিক বেতনের কাছাকাছি চলে আসবে।
নতুন পদনাম ও স্থায়ীকরণের সম্ভাবনা
অন্য এক রিপোর্টে আরও জানা যাচ্ছে, কেবলমাত্র বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং তাঁদের পদের নতুন নামকরণ বা নতুন এক শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করাও হতে পারে। ফলে আগামী দিনে “পার্শ্ব-শিক্ষক” কথাটির পরিবর্তে তাঁরা অন্য কোনো সম্মানজনক পদবিতে পরিচিত হতে পারেন। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শুধু বেতনই নয়, হয়তো অন্যান্য সরকারি সুবিধাও ধীরে ধীরে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
যদিও সরকারি তরফে এখনও এই বিষয়ে কোনও লিখিত বা অফিসিয়াল ঘোষণা আসেনি, তবে দফতর সূত্রে এই নিয়ে নানান স্তরে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
পুরনো ইতিহাস: কতটা এগিয়েছে পার্শ্ব-শিক্ষকদের আন্দোলন?
পার্শ্ব-শিক্ষকরা বহু বছর ধরে নিজেদের ন্যায্য দাবির জন্য আন্দোলন করেই চলেছেন।
- ২০১৮ সালে তাঁদের বেতনে সামান্য বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে।
- এরপর প্রতি বছর ৩% করে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলেও, বাস্তবে তার প্রভাব খুবই সামান্য ছিল।
- বহু শিক্ষক মাসিক ₹১০,০০০–১৩,০০০-এর মধ্যে বেতন পেয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
নোট : তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সমান দায়িত্ব পালন করেও তাঁরা মূল শিক্ষকদের মতো মর্যাদা ও সুবিধা পান না। বিভিন্ন সময় ধরনায় বসা, রাস্তা অবরোধ, মিছিল, এমনকি নবান্ন অভিযানও হয়েছে।
রাজ্য সরকারের বদলানো মনোভাব?
পূর্বতন রাজ্য প্রশাসন প্যারাটিচারদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতির কথা বললেও, তা বাস্তবে খুব একটা প্রতিফলিত হয়নি। তবে SSC দুর্নীতির জেরে যখন শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা প্রশ্নের মুখে, তখনই পার্শ্ব-শিক্ষকদের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া সরকারের পক্ষেও রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে।
এক সিনিয়র সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন,
“পার্শ্ব-শিক্ষকরা শিক্ষা ব্যবস্থার এক অপরিহার্য অঙ্গ। তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি অগ্রাহ্য করা যায় না। বিষয়টি নিয়ে উচ্চস্তরে আলোচনা চলছে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই শিক্ষক মহলে যেমন উৎসাহ তৈরি হয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক মহলেও চলছে জোড়কদমে আলোচনা।
- শাসক দলের তরফে বলা হয়েছে, “মানবিক কারণেই প্যারাটিচারদের দিকে সরকারের নজর রয়েছে।”
- বিরোধীরা অবশ্য বলছে, “এসএসসি দুর্নীতি থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই এই ঘোষণার চেষ্টা চলছে।”
নোট :যদিও রাজ্যের হাজার হাজার প্যারাটিচারের জীবনে এই সিদ্ধান্ত আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারে তা অস্বীকার করা যায় না।
প্যারাটিচারদের প্রতিক্রিয়া
এদিকে এই সম্ভাবনার কথা শুনে অনেক শিক্ষকই আশায় বুক বাঁধছেন। সাম্প্রতিক মুর্শিদাবাদের এক পার্শ্বশিক্ষক বলেন—
“২০ বছর ধরে পড়াচ্ছি। এখনও মাসে ১০ হাজার টাকা পাই। স্কুলে একই সময় যাই, একই ক্লাস নিই, অথচ সুযোগ সুবিধায় আকাশ-পাতাল তফাৎ। যদি সত্যিই ৩৫ হাজার হয়, তাহলে আমাদের জীবন অনেকটাই বদলে যাবে।”
আরেকজন বলেন, “আমরা কেউ সরকারের বিরুদ্ধে নয়, শুধু ন্যায্য বেতন আমাদের দাবি। যদি এই ঘোষণা বাস্তব হয়, তবে আমরাও দেশের শিক্ষা আন্দোলনের অংশ হতে পারব গর্বের সঙ্গে।”
SSC কেলেঙ্কারির মধ্যে এই ঘোষণা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?
SSC নিয়োগ দুর্নীতির কারণে রাজ্য প্রশাসন অনেক চাপে রয়েছে। নতুন করে নিয়োগ শুরু হলেও, এখনও বহু প্রশ্নের উত্তর বাকি আছে। এই পরিস্থিতিতে পার্শ্ব-শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির মতো ইতিবাচক ঘোষণা শুধুই মানবিক নয়, বরং এটি সরকারের জন্য একটি “ইমেজ কোরেকশন মুভ” হিসাবেও দেখা হচ্ছে।
বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে যখন একের পর এক সংকট, তখন এই সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ভালো দিক নির্দেশ করতে চলেছে। বহু বছর ধরে অবহেলিত পার্শ্ব-শিক্ষকদের মুখে হাসি ফোটানো শুধু একটি পদক্ষেপ নয়, এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গির বদল।
এখন প্রশ্ন একটাই—এই সুখবর কত দ্রুত বাস্তবে রূপ নেবে? কবে আসবে সেই অফিসিয়াল ঘোষণা?
সেদিকেই তাকিয়ে এখন গোটা রাজ্যের হাজার হাজার পার্শ্ব-শিক্ষক এবং তাঁদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা।
আপনার এলাকায় কোনও প্যারাটিচার বন্ধু থাকলে এই খবরটি অবশ্যই শেয়ার করুন। কারণ এটা শুধু চাকরির খবর নয়—এটা একজন শিক্ষকের স্বীকৃতির লড়াইয়ের গল্প।