প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ও টেট ফলাফল প্রকাশ নিয়ে সবুজ সংকেত! ২০১০ OBC নিয়ম অনুযায়ী? দেখুন বিস্তারিত – WB Primary Tet 2022-23
WB Primary Tet 2022-23: রাজ্যে একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মামলা পড়ে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এই গুরুত্বপূর্ণ মামলাটি হল ওবিসি মামলা। রাজ্য সরকারের দাবি ওবিসি মামলার কারণে বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সহ বিভিন্ন ফলাফল প্রকাশ ইতিমধ্যে স্থগিত রয়েছে। এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে জানা যায়, রাজ্যে ইতিমধ্যে একটি টেট পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে যার ফলাফল প্রকাশ হয়নি এবং একটি টেট পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার পরও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়নি। জানানো হয়েছে এর পেছনে রয়েছে ওবিসি মামলা। এবার অবশেষে সবুজ সংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
সম্পর্কিত পোস্ট
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের জন্য টানা ৩ দিনের ছুটি ঘোষণা — বিস্তারিত জানুন -WB August Holiday Listআমরা জানি, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক নিয়োগের টেট (TET) পরীক্ষার ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। দীর্ঘ দুই বছরের অপেক্ষার পর এবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ রাজ্য সরকারের কাছে স্পষ্ট নির্দেশনা চেয়েছে—কোন নিয়মে ওবিসি সংরক্ষণ মেনে এই ফল প্রকাশ করা হবে। এর উদ্দেশ্য, ভবিষ্যতে কোনো আইনি জটিলতা এড়িয়ে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা।
টেট ২০২৩: দীর্ঘ অপেক্ষার শুরু
প্রাথমিক টেট ২০২৩ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২৪ ডিসেম্বর। মোট তিন লক্ষ নয় হাজার ৫৪ জন প্রার্থী নাম নথিভুক্ত করলেও পরীক্ষায় বসেন দুই লক্ষ ৭২ হাজার জন। পরীক্ষার পর থেকেই প্রার্থীরা ফলপ্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছেন, কিন্তু ওবিসি সংরক্ষণ নীতির অস্পষ্টতার কারণে পুরো প্রক্রিয়া থমকে আছে।
এদিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা জানিয়েছেন, “দীর্ঘদিন হয়ে গেল পরীক্ষার্থীরা ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু সংরক্ষণ নিয়ে রাজ্যের নির্দেশ স্পষ্ট নয়। তাই রাজ্যের কাছ থেকে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে যাতে পরবর্তীতে আইনি বাধার মুখে পড়তে না হয়।”
সংরক্ষণের জটিলতা: ২০১০ বনাম ২০১৭ সালের নিয়ম
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের নিয়ম অনুযায়ী ওবিসি শ্রেণির প্রার্থীদের ন্যূনতম ৮২ নম্বর পেলে তাঁরা পাশ হিসেবে বিবেচিত হবেন। এই নিয়ম মেনে ফলপ্রকাশ করলে বড় কোনো সমস্যা হবে না বলে পর্ষদের ধারণা।
কিন্তু যদি ২০১০ সালের আইনকে অনুসরণ করতে হয়, তাহলে অনেক প্রার্থী সংরক্ষণের সুযোগ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা । এর ফলে, এই বিষয়টি নিয়ে সরকারী নির্দেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষক নিয়োগের জরুরি প্রয়োজন
টেটের ফলপ্রকাশ আটকে থাকায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও বিলম্বিত করা চ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েক হাজার শূন্যপদ রয়েছে, যা পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
জানা যায়, পর্ষদ ইতিমধ্যে রাজ্যের কাছে শূন্যপদের সঠিক পরিসংখ্যানও চেয়েছে, যাতে ফলপ্রকাশের পরপরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।
২০২২ সালের টেট এবং ডিএলএড বিতর্ক
২০২২ সালে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর টেট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় সাত লক্ষ প্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, যার মধ্যে দেড় লক্ষ প্রার্থী উত্তীর্ণ হন।
কিন্তু পরে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT)-এর নির্দেশ অনুযায়ী, যাঁদের ডিএলএড (D.El.Ed) ডিগ্রি নেই, তাঁদের শিক্ষক হিসেবে যোগ্য ধরা হয়নি। এর ফলে প্রায় ৯২ হাজার প্রার্থী চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েন।
এই অভিজ্ঞতার কারণে ২০২৩ সালের ফলপ্রকাশে পর্ষদ আরও সতর্কভাবে কাজ করতে চাইছে।
বছরে দু’বার টেট নেওয়ার পরিকল্পনা
২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নতুন সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘোষণা করেছিলেন যে, বছরে অন্তত দু’বার টেট অনুষ্ঠিত হবে। সেই অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ফলপ্রকাশ আটকে থাকায় এই উদ্যোগের সুফল এখনও পরীক্ষার্থীরা পাচ্ছেন না। প্রার্থীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে, যা তাঁদের মানসিকভাবে ভীষণ চাপে ফেলছে।
প্রার্থীদের হতাশা ও ক্ষোভ
দুই বছর ধরে ফলপ্রকাশ না হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবল হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং দ্রুত ফলপ্রকাশের দাবিতে আন্দোলনও শুরু করেছেন।
অনেক প্রার্থী বলছেন, সরকার এবং পর্ষদের মধ্যে এই ধরণের অনিশ্চয়তা তাঁদের পেশাগত জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এটি বড় ধাক্কা।
আইনি জটিলতা এড়ানোর প্রচেষ্টা
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বক্তব্য, তাঁদের উদ্দেশ্য একটাই—ফলপ্রকাশের পর যেন কোনো মামলা-মোকদ্দমার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে না যায়। তাই সংরক্ষণ নীতি সম্পর্কে সরকারের লিখিত নির্দেশ পাওয়া জরুরি।
২০১০ এবং ২০১৭ সালের সংরক্ষণ নিয়মের মধ্যে পার্থক্য অনেক। সঠিক নীতি বেছে নেওয়া না হলে ফলপ্রকাশের পর বিপুল সংখ্যক প্রার্থী আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।
রাজ্যের ভূমিকা ও সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত
শিক্ষা দপ্তরের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। তবে, সংরক্ষণ নীতি ঠিক করতে গেলে হয়তো আরও কিছু সময় লাগতে পারে।
সরকারের তরফে চেষ্টারত রয়েছে এমন একটি নীতি প্রয়োগ করা, যাতে সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী উপকৃত হন এবং ভবিষ্যতে আদালতে কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন না হতে হয়।
প্রাথমিক শিক্ষায় শূন্যপদের বাস্তব চিত্র
রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে বর্তমানে কয়েক হাজার শিক্ষক শূন্যপদে রয়েছেন। গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সমস্যা সবচেয়ে প্রকট রয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণে বহু স্কুলে পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
টেটের ফলপ্রকাশ ও দ্রুত নিয়োগের মাধ্যমে এই সংকট অনেকটাই কমানো সম্ভাবনা আছে।
ভবিষ্যতের পথ
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরণের দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে ভবিষ্যতে টেট পরীক্ষার আগে থেকেই সংরক্ষণ নীতি নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত। তাহলে ফলপ্রকাশে আর বিলম্ব হবে না এবং প্রার্থীদের অনিশ্চয়তাও কমবে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগেই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। দ্রুত ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নত করার জন্য অপরিহার্য।
প্রাথমিক টেট ২০২৩-এর ফলপ্রকাশ শুধু প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান হবে না, রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ওবিসি সংরক্ষণ নীতি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত সমাধান না হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও বিলম্ব হবে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিক্ষাক্ষেত্রে।
যদি obc এর সংক্রান্ত মামলা ইতিমধ্যে মিটে যেত তাহলে কোন সমস্যা ছাড়াই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নতুন নিয়োগ এবং নতুন করে টেট পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে কোন দ্বিধাবোধ করত না। তবে আগের নিয়ম মেনে যদি ফলাফল প্রকাশ করা হয় এতে কিছু প্রার্থীর নেতিবাচক ফল আসতে পারে। তবে যেহেতু এখনো পর্যন্ত ওবিসি সংক্রান্ত মামলার কোন সঠিক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না তাই ২০১০ সালে ওবিসি সংক্রান্ত নিয়ম অনুযায়ী আপাতত ফলাফল ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু হতে পারে।