স্মার্ট মিটার নিয়ে মমতার বড় সিদ্ধান্ত: রাজ্যবাসীর জন্য সুসংবাদ, জানুন বিস্তারিত – WB Smart Meter Big Update 2025
স্মার্ট মিটার নিয়ে মমতার বড় সিদ্ধান্ত: রাজ্যবাসীর জন্য সুসংবাদ, জানুন বিস্তারিত - WB Smart Meter Big Update 2025
WB Smart Meter Big Update 2025 : পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগে স্মার্ট মিটার নিয়ে চলমান বিতর্ক অবশেষে বড় সিদ্ধান্তে পৌঁছাল মমতা সরকার। সাম্প্রতিক একটি বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ দফতর জানিয়ে দিল রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে অবশেষে রাজ্য বাসিন্দাদের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস। এই সিদ্ধান্ত এসেছে ক্রমাগত বাড়তে থাকা সাধারণ মানুষের অসন্তোষ এবং বিল নিয়ে ভয়াবহ অভিযোগের প্রেক্ষিতে। আসুন তাহলে আরও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক
সম্পর্কিত পোস্ট
WB OBC List Published 2025 : দেখুন নতুন তালিকা, সংযুক্ত নতুন কাস্ট কী দেখেনিন, PDF ডাউনলোড করুনএর মূলে কী ছিল অভিযোগ?
স্মার্ট মিটার ইনস্টল হওয়ার পর থেকেই বহু গ্রাহক নানা ধরনের অভিযোগ করছেন যেমন –
- আগের তুলনায় বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ।
- এক মাসে ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকার বিল আসছে, যা তাঁদের আয় বা বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
- গ্রাহকের অনুমতি ছাড়াই জোর করে মিটার বসিয়ে দিচ্ছে বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা।
- এতে ট্রান্সপারেন্সির অভাব রয়েছে এবং ব্যবহারকারীরা বুঝতেই পারছেন না মিটার কিভাবে কাজ করছে।
সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত কী?
বিদ্যুৎ দফতরের পক্ষ থেকে ৯ জুন, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে:
“পর্যবেক্ষণের স্বার্থে এবং গ্রাহক অসন্তোষ বিবেচনা করে আপাতত শুধুমাত্র বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাতেই স্মার্ট মিটার স্থাপনের কাজ চলবে। গৃহস্থালির ক্ষেত্রে সমস্ত স্থাপন কার্যক্রম স্থগিত করা হল।”
রাজ্যে কতগুলো স্মার্ট মিটার ইতিমধ্যেই বসানো হয়েছে?
ক্যাটাগরি | মোট সংখ্যা | শতাংশ ভাগ |
---|---|---|
গৃহস্থ বাড়ি | ১,০৪,০০০+ | ৬৫% |
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান | ৫৬,০০০+ | ৩৫% |
মোট | ১,৬০,০০০+ | ১০০% |
স্মার্ট মিটারের সমস্যা কোথায়?
১. অত্যধিক বিল
- রাজ্যের ব্যান্ডেল, বারাসাত, হুগলি-সহ বহু এলাকায় অভিযোগ উঠেছে ৩০০ ইউনিট খরচ করেও বিল এসেছে ১০,০০০ টাকার বেশি।
- গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বিদ্যুৎ খরচের হিসাবের সঙ্গে বিলের কোনও মিল দেখা যাচ্ছে না।
২. অনুমতি ছাড়াই মিটার বসানো
- অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহক অনুপস্থিত থাকাকালীন বা বিনা অনুমতিতে স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে।
- বাড়িতে থাকা প্রবীণ বা শিশুদের সামনে মিটার বদল করা নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে।
৩. প্রযুক্তিগত ত্রুটি ও স্বচ্ছতার অভাব
- মিটার রিডিং ঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে না।
- অ্যাপে রিয়েল টাইম ডেটা প্রদর্শিত না হওয়া বা মিটার ডেটা সিঙ্ক না হওয়া ইত্যাদি অভিযোগ।
মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ
সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে , চাঁপাডালি মোড় সহ বিভিন্ন জায়গায় স্মার্ট মিটার সংক্রান্ত অভিযোগ পৌঁছে গেছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। এরপরে মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশে বিদ্যুৎ দফতর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা যায়। অনেকেই বলছেন, এই হস্তক্ষেপের ফলে অবশেষে গ্রাহকদের অসন্তোষ স্বীকৃতি পেল সরকারি স্তরে।
জেনে নেওয়া যাক স্মার্ট মিটার আসলে কী এবং কেন বিতর্ক?
সুবিধা:
- রিয়েল টাইমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য দেখা যায়।
- এতে ম্যানুয়াল রিডিংয়ের প্রয়োজন নেই।
- অনলাইন বিল পেমেন্ট আরও সহজ হয়।
সমস্যা:
- সঠিকভাবে প্রযুক্তি ইন্টিগ্রেশন না হওয়ায় বিলের ভুল।
- গ্রাহক সচেতনতার অভাব রয়েছে।
- ইনস্টলেশনে জোর জবরদস্তি করা হয়েছে ।
ভোক্তা দৃষ্টিকোণ থেকে কী করা উচিৎ?
করণীয় | আরও বিস্তারিত |
---|---|
বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত যাচাই | আগের মিটারের বিলের তুলনা করুন নতুন মিটারের সঙ্গে। |
অভিযোগ দাখিল | রাজ্য বিদ্যুৎ ভবন, WBSEDCL ওয়েবসাইট বা স্থানীয় অফিসে লিখিত অভিযোগ করুন। |
স্মার্ট মিটার ব্যবহারে ট্রেনিং প্রদান | সরকারের তরফে গ্রাহক সচেতনতা ক্যাম্প শুরু হলে অংশ নিন। |
স্থানীয় প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম ব্যবহার | যদি সমস্যা সমাধান না হয়, গণমাধ্যমে তুলে ধরুন সমস্যা। |
ভবিষ্যতের রোডম্যাপ কী হতে পারে?
সরকার কী করতে পারে:
- ট্রান্সপারেন্ট বিলিং সিস্টেম চালু করতে পারে।
- গ্রাহক শিক্ষার জন্য হেল্পলাইন, ভিডিও টিউটোরিয়াল ইত্যাদি ব্যবহার বাড়তে পারে ।
- পাইলট প্রজেক্ট সফল না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণ রোলআউট স্থগিত রাখা।
- থার্ড-পার্টি নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিকতা যাচাই করতে ।
গ্রাহকদের ভূমিকা কী হবে:
- সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
- অন্ধভাবে মিটার ইনস্টলেশনে সায় না দেওয়া।
- সঠিক প্রশ্ন তোলা এবং প্রতিবাদ করা।
স্মার্ট মিটারের ভবিষ্যত কী?
রাজ্যে স্মার্ট মিটার প্রযুক্তি যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে এটি ভবিষ্যতের শক্তি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় হাতিয়ার হতে পারে। তবে তার আগে প্রয়োজন গ্রাহক আস্থা এবং প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্যতা। এই মুহূর্তে রাজ্যের সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তারা মনে করছেন, “প্রযুক্তি চাপিয়ে নয়, বোঝানোর মাধ্যমেই এগোনো উচিৎ।”
স্মার্ট মিটার নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষকে গুরুত্ব দিয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ঘটনা। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রযুক্তি, সচেতনতা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা—এই তিনটি স্তম্ভের উপর জোর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে প্রশ্ন তোলা, জবাব দাবি করা এবং তথ্যভিত্তিক সচেতনতা গড়ে তোলা।