প্রাথমিক শিক্ষক ৪২,৯৪৯ নিয়োগ ২০১৭ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়, ফের নতুন প্যানেল প্রকাশ – WBBPE TET 2017 Re panel
কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায় ৪২,৯৪৯ প্রাথমিক শিক্ষকের প্যানেল সংশোধনের নির্দেশ। জানুন কেন এই রায়, কীভাবে বদলাবে শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ এবং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা।
WBBPE TET 2017 Re panel: পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতি সীমাহীন হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক কিংবা এসএসসি সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। যদিও গত কিছুদিন আগে রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করে নতুন নিয়োগের নির্দেশনা দেন শীর্ষ আদালত এদিকে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ২০১৭ সালে নিয়োগ হওয়া প্রাথমিক শিক্ষক পদের জন্য প্রায় ৩২ হাজার চাকরি ঝুলে রয়েছে।ঠিক এমন অবস্থায় ফের এক আদালতের নির্দেশনা জারি করা হলো ২০১৭ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্যানেলের উপর।
এদিন কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে ৪২,৯৪৯ জন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সম্পূর্ণ প্যানেল পুনঃসংশোধন করতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, হাইকোর্ট কর্তৃক জানানো হয়- আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে এবং তারপর সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
সম্পর্কিত পোস্ট
মাত্র ৪,৯৯৯ টাকায় হিরোর ইলেক্ট্রিক সাইকেল? জানুন বিস্তারিত - Hero Electric Cycle 2025কেন এই প্যানেল সংশোধনের প্রয়োজন?
মূলত এই নির্দেশের সূচনা হয়েছে ওই শিক্ষক নিয়োগের এক আবেদনকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে। ওই আবেদনকারী বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরিতে নিযুক্ত হলেও, পর্ষদের নথিতে তাঁকে ভুলবশত ‘প্রশিক্ষণহীন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালে তাঁর বেতনক্রম প্রশিক্ষিত শিক্ষক অনুযায়ী সংশোধনও করা হয়, কিন্তু অফিসিয়াল ডকুমেন্ট এবং নম্বর বিভাজনের তালিকায় এখনো পর্যন্ত এই ভুল থেকেই যায়। এর ফলে ৩২,০০০ জন বিতর্কিত শিক্ষকের তালিকায় তাঁর নাম ভুলভাবে লিস্টের থেকে যাই। আর এই ভুল শুধরানোর দাবি নিয়েই আবেদনকারী কলকাতা হাইকোর্টে দ্বারস্থ হন।
আদালতের পরিস্কার নির্দেশনা
এদিন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য মামলার শুনানির পর, শুধুমাত্র আবেদনকারীর তথ্য সংশোধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, পুরো প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ২০১৭ প্যানেল খতিয়ে দেখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়ে থাকে। তিনার মতে, যদি একজনের ক্ষেত্রে এমন ভুল হয়ে থাকে, তাহলে আরও অন্যদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ভূল থাকতে পারে।
এদিন আদালতের মূল নির্দেশ:
- ২০১৭ সালের নিয়োগ প্যানেলে আবেদনকারীর রেকর্ড অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে এবং তাঁকে প্রশিক্ষিত শিক্ষক হিসেবে গণ্য করতে হবে।
- শুধুমাত্র একজন নয়, সমস্ত ৪২,৯৪৯ জন প্রার্থীর তথ্য নতুন করে খতিয়ে দেখে দরকার হলে প্যানেল সংশোধন করতে হবে।
- এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি চার সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বলে আদালত কর্তৃক সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় এবং অন্যদিকে সংশোধিত প্যানেল জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য প্রভাব
মনে করা হচ্ছে এই নির্দেশ রাজ্যের হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষক এবং প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে চলেছে।
এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাব্য প্রভাব তুলে ধরা হলো:
প্রকৃত শিক্ষকদের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা
২০১৭ সালের নিয়োগ প্যানেলে যে সকল প্রার্থীরা ভুলবশত ‘প্রশিক্ষণহীন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাদের অবশেষে তাদের যোগ্যতার স্বীকৃতি পেতে চলেছে। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলা মানসিক অস্থিরতা এবং বিভ্রান্তির অবসান ঘটতে চলেছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা
এই রায়ের ফলে, রাজ্যে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য যাচাই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়াবে। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ভবিষ্যতে আরও সতর্ক হতে বাধ্য হবেন।
নতুন করে তালিকা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা
তবে নতুন করে তালিকা প্রস্তুত হলে অনেকের অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে।এর ফলে কেউ হয়তো বাদও পড়তে পারেন, আবার এখানে কেউ নতুন করে স্থান পেতে পারেন। এই কারণে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হবে।
প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ
কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় যদিও কিছু শিক্ষকের জন্য ভালো খবর কিন্তু অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৭ সালের নিয়োগে এত বড় প্যানেল পুনঃপরীক্ষা করা এবং চার সপ্তাহের মধ্যে ত্রুটিমুক্ত তালিকা প্রকাশ করা সহজ কাজ হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে পর্ষদকে দ্রুত এবং নির্ভুল তথ্য যাচাই করতে হবে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক সফটওয়্যার এবং ডেটা অডিটের মাধ্যমে এই কাজ যথাসময়েও সম্পন্ন করা সম্ভব। তবে, পর্ষদের দক্ষতা এবং আন্তরিকতাই এই কাজে সবচেয়ে বেশি জরুরি থাকা চাই।
ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা
তবে সংশোধিত প্যানেল প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে নিয়োগ প্যানেলে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা, সেটি দেখার বিষয়। অনেকেই মনে করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার এবং স্বচ্ছতার নতুন দিগন্ত খুলবে।
একইসঙ্গে এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে , ভবিষ্যতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যেন এমন ভুল আর না ঘটে, তার জন্য রাজ্য সরকার এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে আরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
যেহেতু কলকাতা হাইকোর্ট কর্তৃক এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেখানে, পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে ২০১৭ সালের ৪২,৯৪৯ জন প্রাথমিক শিক্ষকের প্যানেল সংশোধন করে নতুন তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এই ঘটনা রাজ্যের শিক্ষক সমাজে নতুন আশার সঞ্চার করতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে।
বর্তমানে রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষক এখন অপেক্ষা করছেন, তাঁদের সঠিক মর্যাদা কবে তারা ফিরে পাবে। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল — দ্রুত, সঠিক এবং স্বচ্ছভাবে এই প্যানেলের কাজ সম্পন্ন করা।
কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় বাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে অনেকেই আশাবাদী। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, কবে নতুন করে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ হবে এবং কে কে সেই তালিকায় জায়গা করে পাবেন বা কাদের স্থান পরিবর্তন হবে ।
এটাই হতে পারে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফেরানোর নতুন দৃষ্টান্ত।