রাজ্যের সরকারি কর্মীদের জন্য দুঃসংবাদ! কড়া বার্তা কমিশনের, না মানলে বিপদ- WB Govt Employees News
WB Govt Employees News: আমরা সকলে জানি, পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ (Special Intensive Revision – SIR) শুরু হয়েছে বা কোথাও শেষও হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বহু সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা এই দায়িত্ব পালনে অনীহা বোধ করছেন। এমন সময়, রাজ্য নির্বাচন কমিশন (West Bengal Election Commission) এক কঠোর সরকারি নির্দেশিকা (Government Order) প্রকাশ করেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— সরকারি দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তি অনিবার্য থাকবে।

সম্পর্কিত পোস্ট
SBI দিচ্ছে ৫০,০০০ পর্যন্ত আশা স্কলারশিপ, ১৫ নভেম্বর শেষ তারিখ - SBI Asha Scholarship 2025এনিয়ে সরকারি নির্দেশ জারি: বাধ্যতামূলক BLO ডিউটি পালন না করলে ব্যবস্থা
এদিকে নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রকাশিত নতুন সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে যুক্ত প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীর BLO ডিউটি পালন বাধ্যতামূলক করতে হবে। যদি কেউ এই কাজে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে থাকেন বা দায়িত্বে অবহেলা করে থাকেন, তবে ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (Representation of the People Act, 1950) অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
সূত্র অনুযায়ী জানা যায়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যেই হাজারেরও বেশি BLO অফিসার কর্মস্থলে যোগ দেননি বলে খবর। এর ফলে সংশোধনের কাজ বিলম্বিত করা হচ্ছে।এদিকে নির্বাচন কমিশন কয়েকশো BLO-কে “Show Cause Notice” পাঠিয়েছে এবং এখন নতুন নির্দেশিকায় তাঁদের দ্রুত কাজে ফেরার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট
তাি নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ একটি জাতীয় দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং এটি সরকারি কর্তব্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত।তাই বলা হয়েছে BLO-দের অনুপস্থিতি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। এদিকে কমিশনের মতে, “এই কাজ কেবল একটি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না, বরং নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করছে।”
তার পাশাপাশি কমিশন জানিয়েছে, যদি BLO বা অন্য কোনো সরকারি কর্মচারী ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যার মধ্যে সাসপেনশন, পে কাট বা প্রশাসনিক অ্যাকশন নেওয়া হতে পারে।
BLO নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ, তদন্তের নির্দেশ
যদিও এর পাশাপাশি BLO নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এদিকে জানা গিয়েছে, চার হাজারেরও বেশি BLO নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনেক জায়গায় পার্শ্ব শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক-দের BLO পদে নিযুক্ত করা হয়েছে, যা নিয়ে শিক্ষকমহলে অসন্তোষ তৈরি করেছে।
জানা যায়, এই অভিযোগগুলি রাজ্য নির্বাচন কমিশন (CEO West Bengal)-এর কাছে পৌঁছেছে এবং কমিশন ইতিমধ্যেই প্রত্যেক জেলার জেলা শাসকের (District Magistrate) কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান —
“আমাদের কাছে একাধিক অভিযোগ এসেছে যে, BLO নিয়োগে স্বচ্ছতা রক্ষা করা হয়নি বলে জানা যাচ্ছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং যদি অনিয়ম প্রমাণিত হয়, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিক্ষকদের ক্ষোভ ও DA আন্দোলনের প্রভাব
এই নির্দেশিকার জেরে রাজ্যের শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। DA আন্দোলনের অন্যতম নেতা ভাস্কর ঘোষ মহাশয় বলেন,
“ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য শিক্ষকদের স্কুল বন্ধ রেখে কাজে পাঠানো অযৌক্তিক হয়ে দাড়িয়েছে। শিক্ষকদের উপর অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা তাঁদের মূল শিক্ষাগত দায়িত্বে প্রভাব ফেলছে।”
DA আন্দোলনের সময় থেকেই সরকারি কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বেড়ে চলেছে। BLO ডিউটির অতিরিক্ত চাপ সেই অসন্তোষকে আরও উসকে দিচ্ছে। তাই অনেক শিক্ষক মনে করছেন, তাঁদের মূল কাজের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজে যুক্ত করা হচ্ছে, যা “অতিরিক্ত চাপ ও দায়িত্ববহির্ভূত কাজ”।
কমিশনের পাল্টা অবস্থান: ট্রেনিং ও সুবিধার আশ্বাস
এদিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এই ক্ষোভ প্রশমনে উদ্যোগ নিয়েছে। BLO দের জন্য সাত দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ (Training Program) চালু করা হচ্ছে। এই ট্রেনিংয়ে তাঁদের ভোটার তালিকা সংশোধনের সমস্ত প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে শেখানো হতে পারে।
কমিশন জানিয়েছে,
- BLO দের এই সময় অন্য কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে না।
- তবে কাজ চলাকালীন তাঁদের বদলি করা যাবে না।
- BLO রা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়া হবে।
কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে— “অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না।” যারা কাজ এড়িয়ে চলবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে জানা যায়।
ভোটার তালিকা সংশোধনের গুরুত্ব
ভোটার তালিকা সংশোধন (Voter List Revision) একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মূল ভিত্তি এটি। এর মাধ্যমে মৃত ভোটারদের নাম বাদ, নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি এবং ত্রুটি সংশোধন করা হয়। এই তালিকার উপরই আসন্ন বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের ভিত্তি গড়ে ওঠে।
যদি এই প্রক্রিয়ায় বিলম্ব বা অনিয়ম ঘটে, তাহলে গণতন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হতে পারে বলে অনুমান। নির্বাচন কমিশন তাই সময়মতো কাজ শেষ করতে আগ্রহী এবং সরকারি কর্মীদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া
রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এই নতুন নির্দেশিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে বিরোধীরা বলছেন, সরকার শিক্ষকদের ওপর চাপ তৈরি করছে। অপরদিকে, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মনে করছেন, BLO হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সরকারি কাজেরই অংশ হতে হবে।
একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন,
“BLO-রা মূলত সরকারি কর্মচারী হয়ে থাকে। তাঁদের এই দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখানো আইনবিরুদ্ধ। কমিশনের এই নির্দেশ প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।”
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পরিস্থিতি
বিভিন্ন জেলায় BLO দের অনুপস্থিতির কারণে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ বিলম্বিত হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিসগুলিতে অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ চলছে। অনেক জায়গায় BLO রা কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পরও কাজে যোগ দেননি বলে অভিযোগ।
উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, বীরভূম, নদিয়া ও মালদা জেলায় সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিতির অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানা গিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই এই জেলাগুলির রিপোর্ট তলব করেছে।
প্রশাসনের সতর্কবার্তা
কমিশনের তরফে BLO দের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে—
“এটি কোনো স্বেচ্ছাসেবী কাজ নয়, এটি সরকারি দায়িত্ব হয়ে থাকবে। যদি কেউ অবহেলা করেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একইসঙ্গে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে যে, যদি কেউ বৈধ কারণ দেখিয়ে BLO দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি চান, তাহলে তা লিখিতভাবে তাকে জানাতে হবে। অন্যথায়, অনুপস্থিতি ‘ডেরিলিকশন অফ ডিউটি’ (Dereliction of Duty) হিসেবে গণ্য হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্থিতিশীলতা রক্ষায় উদ্যোগ
তাই নির্বাচন কমিশনের মতে, ভোটার তালিকা সংশোধন কেবল নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য নয়, বরং গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য হয়ে থাকে। যদি BLO রা তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে থাকেন, তাহলে ভবিষ্যতে নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
তাই কমিশন ও প্রশাসন দুই পক্ষই চাইছে— সব সরকারি কর্মচারী একযোগে কাজ করে প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন।
ভবিষ্যতে আরও কড়া ব্যবস্থা আসতে পারে
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ভবিষ্যতে BLO নিয়োগ ও দায়িত্ব পালনে আরও নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে পারে বলে জানা গেছে। BLO দের উপস্থিতি রিয়েল-টাইমে ট্র্যাক করার জন্য মোবাইল অ্যাপ বা ডিজিটাল সিস্টেম চালু করার প্রস্তাবও রয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপগুলি ভবিষ্যতে প্রশাসনিক কার্যকারিতা বাড়াবে এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে গতি আনতে পারে বলে অনুমান।
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি কর্মীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হতে চলেছে। BLO দায়িত্ব এখন শুধু প্রশাসনিক কাজ নয়, বরং গণতান্ত্রিক দায়িত্বের প্রতীক হয়ে থাকবে। যারা এখনও কাজে যোগ দেননি, তাঁদের অবিলম্বে দায়িত্বে ফিরতে বলা হয়েছে। অন্যথায়, কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
Disclaimer:
আজকের এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে প্রকাশিত। এখানে বর্ণিত তথ্যগুলি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ সরকারি নির্দেশিকার ভিত্তিতে উপস্থাপিত করা হয়েছে। কোনো প্রশাসনিক পদক্ষেপ বা আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের আগে সরকারি সূত্র থেকে নিশ্চিত তথ্য যাচাই করে নিন।



